উচু-নীচু পর্বত শ্রেণী পরিবেষ্টিত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা। পাহাড়গুলি সংকীর্ণ উপত্যকায় ভরপুর এবং হালকা বন ও লতায় আকীর্ণ। এর বুক চিরে বয়ে চলেছে কর্ণফুলী। রাঙ্গামাটি জেলার ভৌগলিক অবস্থান উত্তর অক্ষাংশের ২১ - ৫¢ হতে ২৩ - ৪৫¢ এবং পূর্ব দ্রাঘিমাংশের ৯১ - ৪৫¢ হতে ৯২ - ৫৩¢। অবিভক্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন ৫০৯৩ বর্গমাইল বা ১৩১২৮ বর্গকিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে মিজোরাম ও পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি।
রাঙ্গামাটি জেলাকে চারটি প্রধান পর্বতমালা বেষ্টন করে আছে। উত্তরাংশে উত্তর-দক্ষিণ মুখী হাজার ফুট উচু পাহাড়গুলি এ শ্রেণীতে পড়ে। পশ্চিমে ফুরমোন পর্বতমালা; এর উচ্চতা সর্বোচ্চ ১৫১৮ ফুট। এ পর্বতমালা দক্ষিণ-পূর্ব রামগড় পর্বতমালার অনুবৃত্তিক্রম। পূর্বে দোলা ঝিরি যা বেশ কিছু জলপ্রপাত দিয়ে সমৃদ্ধ। সর্ব উত্তরে মাইনী উপত্যকা - ভূয়াছড়ি রেঞ্জ যার উচ্চতা ২০০৩ ফুট। আরো উত্তরে বরকল রেঞ্জ পর্যন্ত এ পর্বতমালা বিস্তৃত। বরকল রেঞ্জটি দু’ভাগে বিভক্ত। একটি শাখা কর্ণফুলী নদীতে মিশে গেছে। অন্য শাখাটি ভারতের মিজোহিলে মিশেছে।
নদীঃ
এ জেলার প্রধান নদী কর্ণফুলী। এ নদী ভারতের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে রাঙ্গামাটি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত দিয়ে ঠেগা নদীর মোহনা হয়ে এ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে। কর্ণফুলীর উপনদীগুলো হলো- কাচালং, চেঙ্গী, ঠেগা, বড়হরিণা, সলক, রাইনখ্যং ও কাপ্তাই।এ উপনদীগুলো বর্ষাকালে যথেষ্ট খরস্রোতা থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে পানির পরিমান প্রায় থাকেনা।
জলবায়ুঃ
রাঙ্গামাটির জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ুর অন্তর্গত। ইহা উষ্ণ ও আদ্র। এখানে ষড়ঋতুর মধ্যে প্রধানত তিনটি জোরালোভাবে পরিলক্ষিত হয়। বর্ষা মৌসুম সাধারণত মে হতে অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এ সময় ৯০% বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। শীতকাল স্থায়ী হয় নভেম্বর হতে ফেব্রুয়ারি। এ মৌসুম অত্যন্ত শুষ্ক ও শীতল, কখনও সামান্য বৃষ্টি হয়। মার্চ ও এপ্রিল মাসকে গ্রীষ্ম বা প্রাক-বর্ষাকাল বলে গণ্য করা হয়। এ সময় বাতাস খুবই উত্তপ্ত হয় এবং বাতাসে জলীয় বাস্প খুব কম থাকে। মাঝে মাঝে ‘কাল বৈশাখী’ বা শিলাবৃষ্টি হয়ে থাকে। এখানে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে নিম্ন তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয় যার গড় প্রায় ২০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এপ্রিল মাসে চরম উষ্ণতা ৩৬.৫ ডিগ্রি এবং জানুয়ারি মাসে চরম শীতলতা ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে।
ভূ-তত্ত্বঃ
রাঙ্গামাটি অঞ্চলটি এ্যান্টিক্লইনাল রীজের সমান্তরাল সমাহার যা মোটামুটি উত্তর পশ্চিম - দক্ষিণ পূর্ব নির্দেশ করে। শিলা স্তরগুলি বেশির ভাগই ধীর বেলে পাথর, বেলের শেল ও শুথু শেল যা টারশিয়ারী যুগের। এ স্তরগুলি ভাঁজ, চ্যুতি, জয়েস্টসহ অন্যান্য ভূ-তাত্ত্বিক চিহ্ন বিশিষ্ট রীজ ক্রেষ্টগুলি ১০০০-৩০০০ উচ্চতা বিশিষ্ট। মূল রীজগু্রলির মাঝখানের সিনক্লাইন বা ট্রাফগুলি আনুপাতিক হারে নীচু যা ৮০০ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত। নদী উপনদীর বিন্যাসগুলি মুলত ইনট্রিকেট। রাঙ্গামাটি পর্বত শ্রেণী ‘আরাকান ইয়োমার’ বর্ধিকরূপ।
এ জেলার শিলা স্তরগুলি পাললিক শিলার অন্তর্ভূক্ত। শিলাগুলিকে পাচটি ফরমেশনে ভাগ করা যায়। এ পাঁচটি ফরমেশন হচ্ছে- ভূবন, বোকাবিল, টিপাম বেলে পাথর, গিরুজানক্লে, ডুপিটিলা ও এ্যালুভিয়াম।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস