পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে চট্টগ্রাম বিভাগ হতে শাসন করা হতো। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলা হতে পৃথক করে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম’ জেলা সৃষ্টি করা হয়। জেলার শাসন কর্তা হিসাবে Superintendent of Chittagong Hill Tracts পদধারী একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রথম Superintendent হিসাবে নিযুক্ত হন Captain Magrath. তিনি চট্টগ্রামের বিভাগীয়কমিশনারের অধীনে দায়িত্ব পালন করতেন। ১৮৬৭ সনে এ জেলার শাসন কর্তার পদ পরিবর্তন করে Deputy Commissioner করা হয়। Capt. T H Lewin এ জেলার প্রথম ডেপুটি কমিশনার নিযুক্ত হন। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম প্রশাসনিক সদর দপ্তর চন্দ্রঘোনায় স্থাপন করা হয়। ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে জেলার সদর দপ্তর রাঙ্গামাটিতে স্থানান্তর করা হয় এবং ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ হতে জেলা প্রশাসনের দাপ্তরিক কাজ চালু হয়। পূর্বে চট্টগ্রাম থেকে এ জেলার শাসন কার্য পরিচালনা করা হতো। Capt. T H Lewin এ জেলার স্থায়ী শাসনকর্তা হিসাবে রাঙ্গামাটিতে চলে আসেন। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে এ জেলাকে Sub-Divission-এ রূপান্তরিত করে চট্টগ্রাম কালেক্টরেটের অধীনে একজন Assistant Commissioner-এর শাসনাধীনেন্যস্ত করা হয়। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে এতদঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনার জন্য Chittagong Hill Tracts Regulation 1900 প্রবর্তিত হলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পুনরায় জেলায় উন্নীত করা হয় এবং শাসনকর্তার পদবী পুনরায় Superintendent করা হয়। একই সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও রামগড় নামে তিনটি মহকুমায় বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেক মহকুমায় একজন Subdivissional Officer বা মহকুমা প্রশাসক পদায়ন করা হয়। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে তিনটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আরো তিনটি মহকুমা যথা,- কাপ্তাই, লামা ও খাগড়াছড়ি মহকুমা গঠন করা হয়। এতে মহকুমার সংখ্যা ছয়টিতে উন্নীত হয়। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে Chittagong Hill Tracts Regulation 1900 সংশোধন করা হয় এবং জেলার শাসনকর্তার পদবী Deputy Commissioner করে একজন ICS সদস্যকে পদায়ন করা হয়। তার অধীনস্থ কর্মকর্তাগণের পদবী Deputy Magistrate বা Deputy Collector এবং Sub-Deputy Magistrate বা Sub-Deputy Collector করা হয়। পূর্বে এ পদবীর নাম ছিল Assistant Superintendent. বর্তমানে জেলা প্রশাসকের অধীনে দুইজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, একজন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, একজন নেজারত ডেপুটি কালেক্টর, একজন রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর, একজন উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার ও সহকারী কমিশনারগণ কর্মরত আছেন। সহকারী কমিশনারগণ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।
ব্রিটিশ সরকার এ নতুন জেলার সাধারণ প্রশাসন, ফৌজদারী ও দেওয়ানী বিচার এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম পরিচালনায় অনুসরণের লক্ষ্যে ২০ জুন ১৮৬০ তারিখের ৩৩০২ নং নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ১৮৬০ সনের ২২ নং আইন জারী করেন। এ আইন একই বছরের ১ আগষ্ট থেকে কার্যকর করা হয়। এ আইনের পাশাপাশি এতদঞ্চলের সর্বক্ষেত্রে ব্রিটিশ শাসন কার্যকর করার জন্য ১৮৬০ সনের ২৪ নং আইন, ১৮৬৩ সনের ৪ নং আইন (বিসি), ১৮৭৩ সনের ৫ নং বিধি এবং ১৮৮১ সনের ৩ নং বিধিসমূহ জারি করা হয়।
১৯০০ খ্রিস্টাব্দে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রবিধানের ৭ ধারা অনুযায়ী জেলার সাধারণ প্রশাসনসহ রাজস্ব, ফৌজদারী ও দেওয়ানী সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে ক্ষমতা জেলা প্রশাসকের উপর ন্যস্ত করা হয়। তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পদাধিকার বলে যগ্ম জেলা জজ এর ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের এখতিয়ারাধীন এ জেলার ‘দেওয়ানী আদালত’ গঠন করা হয়। তিনি পার্বত্য জেলার দায়রা জজ হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রবিধান সংশোধন করে তিনটি পার্বত্য জেলায় দেওয়ানী আদালতের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের মৌলিক গণতন্ত্র আদেশের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম ১১টি থানা পরিষদ ও ৩৯টি ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে আশির দশকে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচীর আওতায় থানাগুলোকে মানউন্নীত করে ‘উপজেলা’ নামকরণ করা হয়। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় দশটি উপজেলা ও ৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। Code of Criminal Procedure 1898 এর ৮(১) উপধারার ক্ষমতা বলে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল বান্দরবান ও লামা মহকুমাকে নিয়ে বান্দরবান ও ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ অক্টোবর রামগড় ও খাগড়াছাড়ি মহকুমাকে নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা গঠন করা হয়। ১৯৮৫ সনে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তিনটি জেলার নামকরণ করা হয় যথক্রমে- ১. পার্বত্য রাঙ্গামাটি, ২. পার্বত্য বান্দরবান ও ৩. পার্বত্য খাগড়াছাড়ি জেলা।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস